গত কয়েক মাসে দেশে-বিদেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহিৃত হওয়া জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিএনপি। গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের নীতির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি নানা অভিযোগ থাকলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো স্ব স্ব স্বার্থের কারণে তাদের সঙ্গ নিয়েছে বার বার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতকে নিয়ে অধিকাংশ মানুষের কাছে অস্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি।
এই ইস্যুতে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কৌশলগত সর্ম্পকের কথা বলেছেন। দলের কয়েকজন নেতাও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে জামায়াত সঙ্গ ছাড়ার কথা বলেছেন।
তার ঐ বক্তব্যের পর গত কয়েকদিনে বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূল বিএনপিতে ভুল সিগনাল যাচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ মহলে দুই রকম বক্তব্য প্রচার থাকলেও সর্বশেষ শুক্রবার বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য বিভ্রান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি শুক্রবার বলেছেন, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আছে এবং থাকবে।
কিন্তু শনিবার রাতে কাজী জাফরের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটে যোগ দেয় জাতীয় পার্টির একাংশ। নব্য ১৯ দলীয় জোট নেতাদের পরিচয় দিতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামীলীগের নেতারা সীমান্ত পাড়ি দেয়া মুক্তিযোদ্ধা।
তখন তিনি তার জোটে কয়েকজন রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাকে দেখান। বিষয়টা তাদের জন্য গর্বের হলেও বিএনপির জামায়াত বিরোধী অংশ চায় বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক শিথিল করা হোক। তবে রাজনৈতিক কৌশলগত সম্পর্কে আপাতত কোনো ফাটল ধরার সম্ভাবনা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বক্তব্যকে ‘কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘জামায়াত নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যই সবকিছু,তবে বিএনপির মহাসচিবের এমন বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশল।’
শরিকদলগুলো বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব অনুযায়ী বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকলেও জামায়াতকে নিয়ে ১৮ দলীয় জোটের সম্পর্ক অটুট থেকেছে। তারও আগে আরো দু’টি দল ও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। সেই জোট ২০০১ থেকে ৫বছর সরকারও পরিচালনা করেছে। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল চারদলীয় জোট সম্প্রসারিত হয়ে ১৮ দলীয় জোট হয়।
এবার শুরু হলো ১৯ দলীয় জোটের রাজনীতি। তবে জোট যতই বড় হোক সবসময় জামায়াতকেই প্রাধান্য দিয়েছে বিএনপি। সরকারে থাকাকালে জামায়াতের কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এমন অবস্থায় যে যাই বলুক জামায়াতকে ছেড়ে দেয়া বিএনপির পক্ষে খুবই কষ্টকর বিষয়।